যুদ্ধের লাভ-ক্ষতির অঙ্ক: কেউ হাসে, কেউ কাঁদে

 

No War

যুদ্ধ শুধু রণক্ষেত্রের লড়াই নয়, এর একটি অন্ধকার অধ্যায় রয়েছে – যেখানে রক্তে লিখিত হয় ক্ষমতার সমীকরণ। অস্ত্র ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী অস্ত্র রফতানিকারক দেশ যেমন আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন যুদ্ধকে লভ্যাংশের খেলায় পরিণত করলেও, এর মূল্য দিতে হয় নিরীহ মানুষকে।

যদিও যুদ্ধের প্রধান দৃশ্যপটে থাকে রক্তপাত, ধ্বংস আর শোক, এর পেছনে লুকিয়ে থাকে জটিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থের সংঘাত। বিশ্বে অস্ত্র রফতানিকারক দেশ বা অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি যুদ্ধ থেকে বিপুল মুনাফা অর্জন করে, অন্যদিকে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ চরম ক্ষতির শিকার হয় এবং হারায় প্রিয়জন, বসতভিটা, জীবিকা এবং নিরাপত্তা।

যারা লাভবান হয়:

  • অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি: যুদ্ধ মানে অস্ত্রের বিশাল চাহিদা। যেসব কোম্পানি যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, বন্দুক, গোলাবারুদ ইত্যাদি তৈরি করে, তাদের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
  • যুদ্ধ-উস্কানিদাতা ও যুদ্ধ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া নেতা: কিছু রাজনীতিবিদ ও শাসক গোষ্ঠী জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে বা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
  • পুনর্গঠন ও কন্ট্রাক্টর কোম্পানি: যুদ্ধশেষে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ গড়ার কাজে নানা আন্তর্জাতিক কোম্পানি মুনাফা করে, যেমন: কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, তেল কোম্পানি, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান।
  • চোরাচালানকারী ও কালোবাজারি চক্র: অস্ত্র, মানব পাচার, ওষুধ বা খাদ্যপণ্য কালোবাজারে বিক্রি করে এরা মোটা অঙ্কের টাকা কামায়।

·    মিডিয়া (কিছু ক্ষেত্র): যুদ্ধের উত্তেজনাপূর্ণ বা চাঞ্চল্যকর খবর ও ছবি বিক্রি করে কিছু সংবাদমাধ্যম জনপ্রিয়তা ও আয় বাড়ায়। অন্যদিকে সংঘাতজনিত খবর বেশি দর্শক টানে, যা বিজ্ঞাপন রাজস্ব বাড়ায়।

যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়:

  • সাধারণ মানুষ (নারী, শিশু, বৃদ্ধ): সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের; তারা ঘরছাড়া হয়, আহত হয়, মারা যায়, শরণার্থী হয়ে পড়ে, মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। এছাড়া বাড়িঘর, হাসপাতাল, স্কুল ধ্বংস হয়

·       নারীও শিশু: শিশুরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। নারীরা সহিংসতা ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

  • স্থানীয় অর্থনীতি: কৃষি, শিল্প, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়; স্কুল, হাসপাতাল ধ্বংস হয়; মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব চরমে ওঠে।
  • প্রকৃতি ও পরিবেশ: বোমা, আগুন, রাসায়নিক অস্ত্রের কারণে বন, নদী, মাটি দূষিত হয়, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়।
  • সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: প্রাচীন স্থাপনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিল্পকর্ম ধ্বংস হয়ে যায়।
  • আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা: একটি দেশের যুদ্ধ অন্য দেশের ওপরও প্রভাব ফেলে যা আঞ্চলিক অস্থিরতা, শরণার্থী সংকট, সন্ত্রাসবাদের বিস্তার হয়।

·         ভবিষ্যৎ প্রজন্ম: যুদ্ধের মানসিক আঘাত (PTSD) বহু বছর থাকে। নতুন প্রজন্ম ঘৃণা ও প্রতিশোধের চক্রে আবদ্ধ হয়।

মূল কথা: যুদ্ধ হলো কিছু হাতেগোনা কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের ব্যবসায়িক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ লাভের হাতিয়ার, কিন্তু এর মূল্য দিতে হয় কোটি কোটি নিরীহ মানুষকে এবং তাদের জীবন, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যায়।

 

Post a Comment

0 Comments