![]() |
ভাইবোন আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম। আমার কলিজার টুকরা ছোট ভাইকে নিয়ে লিখতে বসলে পাতার পর পাতা ফুরিয়ে যাবে তবু লেখা শেষ হবেনা। আজ কতদিন ধরে সে নেই! তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে হবে, এটা তো আমি স্বপ্নে ও কোনদিন ভাবিনি। প্রতিদিন নিয়ম করে কত তথ্য আদান প্রদান হত তোমার সাথে, কত আনন্দ মজার আলাপচারিতা নিত্যদিন। এগুলো এত দ্রুত স্মৃতি হয়ে যাবে এটা কি আমরা কোনদিন ভেবেছিলাম! ভাইয়ারে ময়না পাখি আমার, আল্লাহর রহমতে তুমি আমার একটা বড় শক্তি ছিলে, আমার কোন সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় তোমাকে বলতাম, আর তুমি কি সুন্দর তার সমাধান করে দিতে।
![]() |
| Jubaer Kabir Tushar with Dr Younus |
যুদ্ধ
বিদ্ধস্ত দেশে থাকতে তুমি,
ওই দেশের নানা সংকটের কথা
শুনলেই এত বেশি চিন্তিত
হয়ে পড়তাম বাংলাদেশে থাকা আমরা ভাইবোনেরা, আর
তুমি প্রতিবারই বলতে কোন সমস্যা
নেই, আমি ভালো আছি
আলহামদুলিল্লাহ।
এই
জীবনে কোনদিন আমাদের তুমি টেনশনে /পেরেশানিতে
রাখনি। তোমার সমস্যার কথা কোনদিন মুখ
ফুটে কাউকে জানাওনি! এই যে তুমি
যেদিন শেষ বিদায় নেবে
পৃথিবী থেকে, সেদিন নাকি দেশে খুব
গরম, তুমি ভোরবেলা থেকে
হাসপাতালে ভর্তি হলে অথচ আমাদের
জানালে না! আমাদের নাকি
খুব কষ্ট হবে তোমার
কাছে যেতে, এটা কোন কথা!
তুমি অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি আমরা ভাইবোনেরা কেউই
জানিনা, আহা! অথচ তোমার
অসুস্থতার কথা ঘুনাক্ষরে ও
যদি আমরা জানতাম রে
সোনা, দেশের সবচেয়ে বড় মানসম্মত কোন
হাসপাতালে নিয়ে আমরা তোমার
সেবা নিশ্চিত করতাম! এই অপরাধ বোধ
আমাদের তাড়িয়ে বেড়াবে যতদিন বেঁচে আছি ততদিন।
ভাইবোন
দের সাথে যখনই আলাপ
হয় আমাদের, আলাপের বিষয় এখন একমাত্র
তুমি, মনে হয় নতুন,এই কিছুক্ষণ হয়ত
হল। এক সেকেন্ডের জন্যও তোমাকে ভুলতে পারিনা, তোমাকে চিরকালের জন্য আমরা হারিয়ে
ফেলেছি, এটা মনে হলেই
বুকের মধ্য একটা ব্যাথা
অনুভব হয়,ভালো লাগেনা,
তখন আর কিছুই আমাদের
ভালো লাগেনা।
ভাইয়ারে,তুমি এবার বাড়িতে গিয়ে মাকে বলেছিলে, মাগো তুমি মরে গেলে, তোমার এই পাগল ছেলে কিভাবে এই বাড়িতে আসবে? কিভাবে এই ঘরে ঘুমাবে! অথচ তুমি মাকে আমৃত্যু কাঁদিয়ে আগেই পরকালে পাড়ি জমালে।
বাবুসোনা তুই এতো ভালো ছিলি কেন রে? অণুবীক্ষণযন্ত্র যন্ত্র দিয়েও তো তোর কোন ভুল/দোষ খুঁজে পাইনা আমরা। আল্লাহ তোমাকে এত মানবিক গুণ দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। এত মানুষের ভালোবাসায় তুমি সিক্ত হয়েছ যে তোমার বোন হিসেবে আমি গর্ব বোধ করি। আমরা এগারো ভাইবোন, কি মায়া আর ভালবাসায় আমদের এই বন্ধন। মাঝে মাঝে ভাবতাম আল্লাহর কাছে আমরা কে আগে যাব, আল্লাহ উনার কাছে কাকে আগে নিবেন। কোনদিন আমি চিন্তাই করতে পারিনি আমার একজন ভাইবোন হারিয়ে যাবে আর আমি এটা সহ্য করে আবার স্বাভাবিক হব। কিন্তু আল্লাহ মহান, তিনিই আমাদের শক্তি দেন বলেই বেঁচে আছি এখনও।আসলে
তোমাকে হারিয়ে আমরা কেউই ভালো
নেই। ফেসবুক স্ক্রলিং করলেই তোমার পজিটিভ পোস্ট চোখে পড়ত আর
আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে যেত। নিয়মিত তোমার পোস্ট না দেখলে কেমন
চিন্তায় পড়ে যেতাম, অথচ
আজ তুমি আমদের ছেড়ে
অনন্তলোকে চলে গেছ। একমাত্র সৃষ্টিকর্তায়
জানেন এই হারানোর কষ্ট
কতটা বেদনার।
গ্রামের
আবালবৃদ্ধবনিতা সকল পেশার মানুষ
তোমাকে নিয়ে শোকগাথা বানিয়ে
ফেলেছে।কেউই তোমার চলে যাওয়া স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে
পারেনি।পুরো গ্রামের মানুষগুলো হাজির হয়েছিলো তোমার শেষ বিদায়ের দিন।তুমি
সবার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলে।সকল সমালোচনার উর্ধ্বে ছিলে তুমি,আপাদমস্তক
একজন মহৎ প্রানের
অধিকারি ছিলে।অসাধারণ মানবিক মানুষের সব গুণের বহিঃপ্রকাশ
ছিল তোমার। দেশকে তোমার মত করে কে
আর বিশ্বের বুকে রিপ্রেজেন্ট করেছে!তোমার যতটুকু সক্ষমতা তার সবটুকু দিয়ে
বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ কে
তুমি চিনিয়েছ।ফেসবুক পোস্ট গুলো ছিল শুধুই
অনপ্রেরণার। তুমি নেই হঠাৎ
চিন্তা করলে বুকের ভেতর
কেমন মোচড় দেয়। কি
হরিয়েছি আমরা, কাকে হারিয়েছি?
আমাদের ভাই-বোনদের অনুজ তুমি, যার বিদায় হত সাধারণত সবার শেষে সেই তুমি চলে গেল সবার আগে। আব্বা চলে যাওয়ার পর যে কষ্ট পেয়েছিলাম, এখন যেন তা নতুন ভাবে আবার অনুভব করছি। কি বলবো এখন তো কষ্ট আরো বেশি পাচ্ছি। কত স্মৃতি তোমার সাথে, কি ভাবে কাটাবো তোমার শোক, আমাকে বলো তুমি?
লেবানন থেকে এসেছিলে তুমি মাএ কদিনের জন্য। কত ব্যস্ততা তোমার, কতশত প্ল্যান। মায়ের জন্য এই করতে হবে, সেই করতে হবে। শীতে মায়ের যেন কষ্ট না হয় সে জন্য কত চিন্তা তোমার। সবগুলো ভাইবোনের জন্য কিছু একটা করতে হবে। কত গুলো ভাগ্নে-ভাগ্নী আর ভাতিজি তোমার, তাদের জন্য কিছু করতে হবে, সবসময় ওদের উদ্দেশ্য বলতে একদিন ওরা অনেক বড় হবে, পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। প্রিয়ভাই আমার পরিবারে সুখ দু:খের কত গল্প হবে, শুধু তুমি কোনদিন আর আমাদের কোন খবর নেবেনা,এটা কি মানা যায়?
![]() |
| Tushar with his sister (Naznin) |
শ্বশুর
বাড়ির সবার প্রতি কি
মহান দায়িত্ব তোমার। সবার প্রতি কি অকৃত্রিম ভালোবাসা
দেখিয়েছ। অর্ধাঙ্গীকে সময় দিতে হবে,
সে কিসে খুশি হবে,সারাক্ষন সেই চিন্তা তোমাকে
তাড়িয়ে বেড়াত। বন্ধবান্ধব, আত্মীয় স্বজন সবার জন্য ভালোবাসা।কেউ
তোমার সাথে খারাপ হলে
তুমি তার প্রতি একশোগুন
ভালো আচরন করতে।পরিবারের সবার
ছোট তুমি অথচ সবচেয়ে
বেশি দায়িত্ব তোমার। সবাই
আছে, শুধু তুমি নেই।
আমি এখনো বিশ্বাস করতে
পারি না তুমি নেই!
মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে
ভাবি এই তুমি ফোন
দিবে। বলবে, "এই ডলি কি
করছিস? তোর খোঁজ নিই
নি বলে রাগ করছিস
নাতো?"
যেমন
এসেছিলে হঠাৎ করে তেমনি
চলে গেলে হঠাৎ
করে। সুগন্ধী ফুল যেমন তার
সুবাস রেখে যায় তেমনি
তুমিও তোমার স্মৃতি ছড়িয়ে রেখেছো আমাদের মাঝে।
কিভাবে
মানুষকে ভালোবাসতে হয়, শ্রদ্ধা করতে
হয় তা তুমি তোমার
কর্মের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিলে।তুষার তুমি চলে গিয়েছো,
একবার কি জিজ্ঞেস করতে
ইচ্ছে হয় না আমরা
কেমন আছি?
আমরা
ভালো নেই তোমাকে ছাড়া,
আর কোনদিন হয়তো আগের মতো
হবো না আমরা। তবু
আমাদের সামনে এগিয়ে চলতে হবে, যে
আনন্দ, আবেগ-ভালোবাসা তুমি
দিয়েছো আমাদের তা ছড়িয়ে দিতে
হবে সবার মাঝে। খুব
শীঘ্রই আবার
আমাদের দেখা হবে এই
আশায় বাকি দিন কাটাই।আল্লাহ
তোমাকে উনার কাছে নিশ্চয়
ভালো রেখেছেন। মহান আল্লাহ সুবহানা
তায়াল তোমাকে বেহেশতে সর্বোচ্চ
মর্যাদায় রাখুন।



0 Comments