বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার কর্মীরা
সাধারণত মৃত্যুদণ্ডের ((ফাঁসি, গুলি, ইনজেকশন)) বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, এবং এর
পেছনে কয়েকটি নৈতিক, আইনি ও বাস্তবিক যুক্তি রয়েছে। এই যুক্তিগুলোর কারণে অনেক দেশ
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে বা প্রয়োগ কমিয়ে এনেছে।
জীবন নেওয়ার অধিকার কারও নেই (মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি)
মানবাধিকারের অন্যতম মৌলিক নীতি হলো "জীবনের
অধিকার"। রাষ্ট্র বা আদালতও যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করে, তবে সেটিও
মানবাধিকারের পরিপন্থী হয়ে যায়।
ন্যায়বিচারের ত্রুটি ও নিরপরাধ ব্যক্তির শাস্তি পাওয়ার ঝুঁকি
- অনেক ক্ষেত্রে ভুল বিচারের কারণে নিরপরাধ ব্যক্তিকে
মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
- পরে প্রমাণিত হলেও, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেলে সংশোধনের
সুযোগ থাকে না।
- বিশ্বব্যাপী বহু নিরপরাধ ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর
নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ড অপরাধ দমনে কার্যকর নয় (গবেষণা ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে)
- অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, মৃত্যুদণ্ড থাকলেও অপরাধের হার
উল্লেখযোগ্যভাবে কমে না।
- অপরাধী জানে না যে সে ধরা পড়বে কিনা, তাই ভয় পাওয়ার
সম্ভাবনা কম।
- অপরাধ প্রতিরোধে ন্যায়বিচার, শিক্ষা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা
কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বৈষম্যমূলক প্রয়োগ (ধনী-গরিব ও সামাজিক প্রভাব)
- ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা ভালো আইনজীবী রাখতে পারে, তাই
তাদের মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি কম।
- দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষে সুবিচার পাওয়া কঠিন
হয়, ফলে মৃত্যুদণ্ডের বেশি শিকার হয়।
মৃত্যুদণ্ড অমানবিক ও নিষ্ঠুর শাস্তি
- মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতিগুলো (ফাঁসি, গুলি,
ইনজেকশন) বর্বর ও অমানবিক বলে বিবেচিত হয়।
- এটি ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের জন্য মানসিক যন্ত্রণা
সৃষ্টি করে।
রাষ্ট্রের উচিত নয় হত্যা করা (নৈতিক ও আধুনিক রাষ্ট্রনীতি)
- রাষ্ট্র যদি হত্যা করে, তবে সেটি সহিংসতার বৈধতা দেয়।
- আধুনিক ও সভ্য সমাজে বিকল্প শাস্তি ও পুনর্বাসন পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া উচিত।
মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে বিকল্প শাস্তির ব্যবস্থা
- · আমৃত্যু কারাদণ্ড বা দীর্ঘমেয়াদী
কারাদণ্ড দেওয়া হলে অপরাধী সংশোধনের সুযোগ পায়।
- · এটি পরিবারকেও কম ক্ষতির সম্মুখীন করে
এবং সমাজের জন্যও ভালো হতে পারে।
জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি
ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো মৃত্যুদণ্ডের
বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। তাদের মতে, মৃত্যুদণ্ড একটি অমানবিক ও
নিষ্ঠুর শাস্তি, যা মানবাধিকারের মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থী। এমনকি গুরুতর অপরাধের
ক্ষেত্রেও জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে।
বর্তমানে, বিশ্বের ১৩০টি দেশ তাদের
আইন প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড ব্যবহার করে না। সম্প্রতি, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে,
জিম্বাবুয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করেছে।
মোটকথা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ মৃত্যুদণ্ডকে অমানবিক শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করে এবং এটি বাতিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
2 Comments
Agree
ReplyDeleteThanks!
Delete